স্বচ্ছতা, সুশাসন ও সামাজিক সমস্যায় স্পষ্ট বক্তব্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের**
মুক্তাগাছা প্রতিনিধি:
মুক্তাগাছায় অনুষ্ঠিত ব্যতিক্রমধর্মী “জনতার মুখোমুখি” সভাটি স্থানীয় জনজীবনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ সভায় জনগণের বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। স্থানীয় প্রশাসন, সামাজিক সমস্যা, উন্নয়ন, দুর্নীতি, মাদক—সব বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হয় সারাবাহিনীর মানুষের সামনে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ মো. শামীম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—
-
মাওলানা বদরুল আলম, জেলা কর্ম ও শূরা সদস্য
-
অধ্যাপক শামসুল হক, উপজেলা আমির
-
আফতাবুর রহমান আকন্দ, পৌরসভা আমির
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এডভোকেট মো. নাজমুল হক।
উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন গ্রামের শিক্ষক, ব্যবসায়ী, যুবসমাজ, নারী প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
মাদকবিরোধী প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান
জনতার প্রথম সারির প্রশ্ন ছিল মাদক সমস্যা নিয়ে। মাদক ব্যবসা ও মাদকাসক্তির কারণে মুক্তাগাছার যুবসমাজের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন কয়েকজন অভিভাবক। উত্তরে অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন—
“মাদক নির্মূল করা শুধু প্রশাসনের দায়িত্ব নয়। পরিবার, সমাজ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব—সব পক্ষের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ ছাড়া মাদককে পরাজিত করা সম্ভব নয়। যুবসমাজকে সুস্থ পথে ফেরানোই আমাদের বড় কাজ।”
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন এলাকায় যুব উন্নয়নমুখী কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমনে কঠোর বার্তা
দুর্নীতি নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন—
“দুর্নীতি উন্নয়নের প্রধান বাধা। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতিবিরোধী স্বচ্ছ নীতি প্রয়োগ করা জরুরি। জনগণের করের অর্থ যেন সঠিক জায়গায় ব্যয় হয়, সেটি নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“সাধারণ মানুষ যদি নিজ নিজ অবস্থানে সততা বজায় রাখে, তবে বৃহৎ দুর্নীতিও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।”
সভায় উপস্থিত কয়েকজন ব্যবসায়ী স্থানীয় প্রশাসনিক কাজে ঘুষের অভিযোগ তুললে তিনি ওই বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দেন এবং সুষ্ঠু প্রশাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সুপারিশ শোনেন।
প্রশাসনিক অনিয়ম নিয়ে জনতার ক্ষোভ
অনেক অংশগ্রহণকারী নিত্যদিনের প্রশাসনিক ঝামেলা, কাগজপত্র জটিলতা, এনআইডি/সার্টিফিকেট সংক্রান্ত হয়রানির অভিযোগ করেন।
জবাবে অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন—
“নিয়ম-কানুন জনগণের কল্যাণের জন্য। যদি কোথাও অনিয়ম বা হয়রানি থাকে, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণের সুবিধা নিশ্চিত করাই প্রশাসনের মূল দায়িত্ব।”
তিনি আরও বলেন, জনগণের অভিযোগ যথাযথভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পৌঁছানো হবে, যাতে দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করা যায়।
উন্নয়ন পরিকল্পনা ও জনমত
স্থানীয় জনতা ইউনিয়ন ও উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন—
“উন্নয়ন মানে শুধু রাস্তা-ঘাট নির্মাণ নয়; শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও কর্মসংস্থান—সব খাতে ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
গ্রামীণ সড়ক সংস্কারে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং সরকারি নকশা অনুযায়ী কাজ করার বিষয়ে তিনি কঠোর অবস্থানের কথা জানান।
জনতার প্রশংসা—‘এ ধরনের সভা আরও প্রয়োজন’
সভা শেষে বহু অংশগ্রহণকারী জানান—
“জনতার সামনে একজন জাতীয় পর্যায়ের নেতা এসে সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন—এটি আমাদের জন্য বড় সুযোগ। আমরা আমাদের সমস্যা নিজেই তুলে ধরতে পারছি, আবার সমাধানের পথও জানতে পারছি।”
মুক্তাগাছার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। কেউ বলেন কৃষি–সংক্রান্ত সমস্যা, কেউ বলেন রাস্তা–ঘাটের দুরবস্থা, কেউ বলেন সামাজিক সংকটের কথা। সমগ্র সভা জুড়ে ছিল জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং বাস্তব সমস্যার সরাসরি আলোচনার পরিবেশ।
সভা শেষে যে চিত্র উঠে এলো
-
মানুষ প্রশাসন ও নীতিনির্ধারকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ চায়।
-
মাদক ও দুর্নীতি—দুই ইস্যুতেই জনমনে গভীর উদ্বেগ।
-
উন্নয়ন ও সেবাপ্রদান ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার দাবি জোরালো।
-
স্থানীয় জনগণ এমন সভা নিয়মিত আয়োজনের দাবি তুলেছেন।
মুক্তাগাছায় আয়োজিত এ জনতার মুখোমুখি সভা স্থানীয় জনজীবনে সরাসরি অংশগ্রহণের একটি নজির তৈরি করেছে। মানুষের প্রশ্ন, উদ্বেগ ও প্রত্যাশা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, যা ভবিষ্যতে প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও জনমুখী করতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।











